অমৃতনির্ঝর রবীন্দ্রজীবন । তার অনাহত স্রোতে এ যুগের মানুষ নিরন্তর ভাসমান । আর জীবনে জীবন যােগ হয়েছে যাদের , পরশমণির স্পর্শে যাঁদের অন্তরস্থিত ‘ আমি’র উন্মােচন সম্ভব হয়েছে , তাদের কাছে রবীন্দ্রনাথই শেষ কথা । কিন্তু মুশকিল বাঁধে তখন যখন দেখি প্রতিদিনের জীবনে রবীন্দ্রনাথকে গ্রহণ না করতে পারার মানুষও আমাদের চারপাশে খুব একটা কম নেই। তখন পথ একটা খুঁজে নিতেই হয় । বুঝতে পারি জীবনকে যারা ভালাে - মন্দ , কিংবা স্বর্গ - নরকের দুই কিস্তিতে ভাগ করে রাখেন , তারা ঠিক আর যাই বুঝুন 'রবীন্দ্রনাথ ’ বুঝবেন না । আর ঠিক এই জায়গাটি থেকেই একটা পথ খোঁজার চেষ্টা চলতে থাকে । খোঁজ চলতে থাকে রবীন্দ্রজীবনের সুদীর্ঘ কর্মপথ পরিক্রমার । সেই পথের আলাে - আঁধারের খোঁজ সবে শুরু হল ।
এই রবীন্দ্রনাথ কোনাে অতিমানব বা অতিলৌকিক পুরুষ নন । এই পৃথিবীর ধুলােট উৎসবে তিনি একাকী মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান। দুঃখে শোকে অবিচল, কর্তব্যে দৃঢ়, নিন্দা - আঘাতে আত্মস্থ, প্রেমে দীপ্ত পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে দাঁড়ান। এই রবীন্দ্রনাথ আমাদের দৃষ্টিকে প্রসারিত করে দেন। একাকী মানুষের কাঁটা বিছানাে পথকে রমণীয় করে তােলেন । সেইসব ‘ 'রবীন্দ্রনাথ’ গ্রহণ করতে না পারা মানুষগুলােরও পাশে এসে দাঁড়ান তিনি। কানে কানে বলে যান , বেদের যুগে যদি তপােবন থাকে , বৌদ্ধযুগে যদি নালন্দা থাকে, তবে এ যুগের উচ্চ আদর্শ রবীন্দ্রনাথ শুধুই কি ‘ মিলেনিয়ামে’র দুরাশা হয়ে পরিহাস কুড়ােবে ? তেজোদীপ্ত সূর্য তাে থাকবেই তা বলে ‘মাটির প্রদীপ ’ কি জ্বলবে না ? দেখতে পাই আমার ‘ রবীন্দ্রনাথ ’ তেজোদীপ্ত সূর্য হয়েও মাটির প্রদীপটিকে আগলে রেখে হেঁটে চলেছেন এক অনন্ত আশ্রমের দিকে ।