যে মহিয়ষী মহিলা, সর্ব প্রথম বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আল্লাহ্ নবী বলিয়া বিশ্বাস করিয়া ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করিয়া দুনিয়ায় অমর কীর্তি স্থাপন করে গিয়েছেন, সেই মহাপুণ্যবতী ও চিরস্মরণীয়া মহিলা নাম হযরত খাদীজা তাহিরা (রাঃ)।
ইসলামের ইতিহাসে হযরত খাদীজা (রাঃ) মত ব্যক্তিত্ব সম্পন্না রমণী আর কেহই নাই। তিনি নিজের অতুল ঐশ্নবর্য বিলিয়ে দিয়েছিলেন ইসলামের ইসরামের খিদমতের জন্য, তা ছাড়াও অশেষ দুঃখ-কষ্ট ও নাঞ্ছনা-গঞ্জনা সহ্য করেছিলেন তিনি বিধর্মীদের হাতে, ইসলাম গ্রহণ করার জন্য। হযরত খাদীজা (রাঃ)-র দানের কথা সমগ্র দুনয়িার মুসলমানগণ কিয়ামত পর্যন্ত অত্যন্ত শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।
হযরত খাদীজা (রাঃ)-কে জানতে হলে, তৎকালীন আরবের পরিবেশ, প্রাকৃতিক অবস্থা অধিবাসীদের আচার-ব্যবহার, চালচলন, রীতিনীতি প্রভৃতি বিষয়ে একটা মোটামুটি ধারণা থাকা আবশ্যক। হযরত খাদীজা (রাঃ) জন্মের পূর্বে আরবের সমাজ ব্যবস্থা ছিল ভয়াবহ!
আরব দেশ আজ সমগ্র মুসলিম বিশ্বের নিকট পুণ্যময় দেশ হিসেবে পরিচিত। যার বুকে সমগ্র মুসলমানদের পবিত্র কাবা শরীফ অবস্থিত এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর পবিত্র রওজাকে বুকে ধারণ করে তাকে সারা দুনিয়ার মধ্যে অনুপম মহিমায় ও সেরা গৌরবময় দেশরূপে পরিণত করেছে যে আরবের কেন্দ্র থেকে নিখিলের নিপিড়ীত মানবের মুক্তির দূত আগমন করে সারা বিশ্বকে আলোকিত করেছে, যে আরব ভূমি থেকে আলোকমশাল বের হয়ে সারা বিশ্বকে আলোকোজ্জল করেছে, প্রাচীন কালে সে আরব দেশের অবস্থা ছিল খুবই করুন।
কুরাইশ বংশে ষষ্ঠ পুরুষের নাম ছিল কুরাইশ ইবনে কিলাব। তিনি একজন বিশেষ প্রসিদ্ধ ব্যক্তি ছিলেন। কুরাইশ ইবনে কিলাবের তিন পুত্র ছিল আবদুল মান্নাফ, আবদুদ্দার ও আবদুল ওজা।
আবদুল মান্নাফের পুত্রের নাম ছিল হাশেম। ইনিও অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন। সেইজন্য তাহার বংশধরদিকে হাশেমী বংশ বলা হইত। এই সম্মানিত হাশেমী বংশেই জন্মগ্রহণ করেন প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
হাশেমের এক পুত্রের নাম ছিল আবদুল্লাহ্। আবুদল্লাহ্র পত্রের নাম ছিল মুহাম্মদ। ইনিই আমাদের বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)।
কুসাই ইবনে কিলাবের অন্যতম পুত্রের নাম ছিল আবদুল ওজ্জা। আবদুল ওজ্জার পুত্রের নাম ছিল আসাদ এবং আসাদের পুত্রের নাম ছিল খুওয়াইলিদ।
খুয়াইলিদের কোন পুত্র সন্তান ছিল না- ছিল শুধু একটি মাত্র কন্যা। এই কন্যাই বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সহধর্মিনী- হযরত খাদীজা (রাঃ)।
৫৫৫ ঈসায়ী সনের কোন এক সকালে আসন্ন সন্তান-সম্ভবা ফাতিমার প্রসব ব্যথা শুরু হয়। খোয়াইলিদের চোখে-মুখে আনন্দ, ঘরে ব্যতিব্যস্ততা ও ব্যগ্রতা প্রকাশ পেতে লাগল। প্রতিবেশীরা বুঝতে পারল যে, ফাতিমার সন্তান প্রসবের সময় উপস্থিত হয়েছে।
বেশি সময় অতিবাহিত হল না। ইতোমধ্যে ফাতিমা এক কন্যা সন্তান প্রসব করলেন। ঘরের মধ্যে থেকে একজন মহিলা বের হয়ে খোয়াইলিদের কাছে এ সংবাদ পৌছে দিল।
সংবাদ শুনা মাত্র তার দু'মাস পূর্বে দেখা ফাতিমার স্বপ্নটির কথা মনে পড়ে গেল। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা করে বললেন, ওহে প্রভু! তুমি ফাতিমার স্বপ্নকে সফল করে দাও।
সদ্য ভূমিষ্ঠা এ কন্যাই সর্বদিক থেকেই যারপর নাই সুদর্শনা, সুলক্ষণা অনুপম ও সুশ্রী ছিল। কন্যাকে দেখে জনক-জননীর চোখ জুড়ে গেল এবং আনন্দে অন্তর শীতল হয়ে গেল।
পাড়া-প্রতিবেশীগণ দলে দলে ছুটে এসে খোয়াইলিদের এ শিশু কন্যা দেখো বিভিন্নরূপে তার প্রশংসা করতে লাগল এবং জনক-জননীকে ধন্যবাদ জানাতে লাগল।
খাদীজার দেহের বর্ণ ছিল লাল গোলাপ অথবা দুধে আলাতার সংমিশ্রণ- যাহা আরবের অন্য কোন শিশুর শরীরের বর্ণের সহিত সামঞ্জস্য বিহীন, অধিকন্ত তার শরীর হতে যেন সর্বদাই একটা উজ্জল আভা বিচ্ছুরিত হত।
ভূমিষ্ট হওয়ার পর হইতে তার দেহ হতে গোলাপের ন্যায় একটা মৃদু মধুর গন্ধ নির্গত হত।
যথা সময়ে জনক-জননী তাদের অতি আদরের শিশু কন্যার নাম রাখলেন খাদীজা। শিশু খাদীজা তার পিতা ও মাতার একান্ত আদর ও যত্নে লালিত-পালিত হতে লাগলেন এবং একটু একটু করে দিন দিন বড় হতে লাগলেন।
তার মধ্যে কতগুলি বৈশিষ্ট্য ও স্বাতন্ত্র্য পরিলক্ষিত হতে লাগল। খাদিজা খুবই কম কাঁদতেন।
তার হাসির মধ্যে অপূর্ব মাধুর্য্য ফুটে উঠত। খাওয়ার জন্য অন্যান্য শিশুদের মত মাতাকে বিরক্ত করতেন না। পায়খানা-প্রস্রাবের বেগ হওয়া মাত্রই মাতৃকোল থেকে নেমে পড়ার জন্য উদ্বেগ শুরু করতেন।
এভাবে বিভিন্ন ব্যাপারে তার মধ্যে অ-শিশু সুলভ কিছু কিছু নির্দশন দেখা যেত। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে আরবের লোকেরা যেমন বাল্যকাল হতেই অত্যন্ত ভালবাসিত ও বিশ্বাস করিত, খাদীজা (রাঃ)-কেও তেমনি মক্কার সর্বস্তরের লোকেই বিশ্বাস করত ও ভালবাসতো।
হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-কে যেমনি বাল্যকালেই মক্কার লোকেরা "আল আমীন” অর্থাৎ, “বিশ্বাসী" উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন, খাদীজার চরিত্রে জন্য ঠিক তেমনিই মক্কার লোকেরা তাকে "তাহিরা” অর্থাৎ, “পবিত্রা” উপাধিতে ভূষিত করেছিল।
Aktualisiert am
17.07.2024
Bücher & Nachschlagewerke